1. sajalnath8181@gmail.com : admin2020 :
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন

মুন্নি আক্তার।
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২
  • ২৮২ বার পঠিত

দিনভর পথে পথে দুর্ভোগ

মুন্নি আক্তার, স্টাফ রিপোর্টার :

জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গত শুক্রবার রাতে। আর রাত না পেরোতেই চট্টগ্রামে পরিবহন খাতে এ কারণে সৃষ্টি হয়েছে নৈরাজ্য। গতকাল শনিবার সকাল থেকে নগরীতে কার্যত বাস, হিউম্যান হলারসহ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। সিএনজি টেক্সিসহ যেসব গাড়ি চলেছে তারা ভাড়া হাঁকায় দ্বিগুণেরও বেশি। সকালে কর্মস্থলে যেতে লোকজনকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ির দেখা না পেয়ে অনেকে হেঁটেই রওনা দেন গন্তব্যে। দিনভর যান চলাচলে বাধা, মানুষের ভোগান্তির পর সংগঠনটি গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও নগরীতে বাস-হিউম্যান হলারের খুব একটা দেখা মিলেনি। গতকাল শনিবার সকালে আগ্রাবাদ এলাকায় দেখা গেছে, শত শত শ্রমিক জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন। এছাড়া নগরীর আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তাদের বিক্ষোভ পালন করতে দেখা যায়। আকস্মিক এই বিক্ষোভের কারণে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ। শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে সড়কে চলাচলকারী ছোট যানবাহন চলাচলের পরিমাণও কমে যায় হঠাৎ করেই। যাত্রীরা সড়কে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস পাননি। জরুরি প্রয়োজনে কেউ রিকশা কিংবা সিএনজিতে চলাচল করেছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক কিংবা প্রাইভেট কারে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছান। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পায়ে হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে দেখা গেছে। আবার বিভিন্ন মোড়ে গণপরিবহন চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অনেকে।
ভোগান্তির বিষয়ে কর্মস্থলগামী কয়েকজন জানান, শনিবার সকাল থেকে অক্সিজেন, দুই নম্বর গেইট, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও সিএন্ডবি, জিইসি, টাইগারপাস ও আগ্রাবাদ এলাকায় গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। সকাল ৭টার পর থেকে কর্মস্থলে যেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাদের।
নগরীর বহদ্দারহাট থেকে নিউমার্কেট যাবেন আবদুল খালেক। মেয়েকে নিয়ে বহদ্দারহাটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। খালেক বলেন, নিউমার্কেটের মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েকে দিতে যাব। কিন্তু বাস বন্ধ। বিকল্প উপায়ে যেতে বেশি ভাড়া লাগছে। তিনি মেয়েকে নিয়ে হেঁটেই রওনা দেন। অর্ধেক পথ হেঁটে তারপর রিকশা নেন। আগ্রাবাদ থেকে জিইসি এলাকায় যাবেন বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আবদুল আউয়াল। তিনি বলেন, এক ঘণ্টা ধরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। সিএনজি দেখলাম তারা ১৫০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা বলছে। রিকশায় যেতে চাইলাম তারা ১৫০ টাকা চাইছে। সুযোগে যে যেভাবে পারছে ভাড়া চাইছে, বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে।
দেওয়ানহাট এলাকায় কথা হয় গার্মেন্টসকর্মী রোজিনার সঙ্গে। তিনি যাবেন ইপিজেড। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে এক ঘণ্টার উপরে অপেক্ষা করেও পায়নি কোনো গণপরিবহন। এদিকে সামর্থ্য না থাকায় সিএনজিতেও যেতে পারছেন না তিনি।
লালখানবাজার মোড়ে রিকশাওয়ালার সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা করছেন মো. নাসিম। তিনি বলেন, লালখানবাজার থেকে মুরাদপুর যাব। গাড়ি না পেয়ে রিকশায় যাবার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু ভাড়া শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ভাই। ভাড়া নাকি ১২০ টাকা দিতে হবে। আজব দেশে বাস করি। কোনো নিয়ম নেই।

গ্যাসের দাম তো বাড়েনি তবুও বাড়তি ভাড়া কেন নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিএনজি টেক্সি চালক মো. নেজাম বলেন, যাত্রীর পরিমাণ বাইড়া গেছে। আমরা বাড়তি টেহা চাইতাছি না। যাত্রীরাই বাড়তি টেহা দিয়া যাইতাছেন।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, শুধু রিকশা আর গুটিকয়েক অন্যান্য যানবাহন চলতে দেখা গেছে। একসঙ্গে কর্মস্থলমুখী লোকজন বেশি হওয়ায় এসব যানবাহনে যাত্রীদের প্রচুর চাপ। অনেকে সিএনজি টেক্সি ও মিনি ট্রাকে চড়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কেউ কেউ কর্মস্থল পৌঁছান। পায়ে হেঁটে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েও অফিসে যেতে দেখা গেছে অনেককে।
চট্টগ্রাম বন্দর জোনের ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়নোর প্রতিবাদে সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষোভ করায় যানবাহনের শিথিলতা দেখা গেছে সড়কে। তবে সকাল থেকে ইপিজেডে শ্রমিক বহনের গাড়িগুলো পৌঁছেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। ঢাকার নেতাদের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। শনিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন।
এদিকে গতকাল দেখা গেছে নগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলা থেকে মহানগরীতে বাস চলাচলও অনেক কমে গেছে। অল্পসংখ্যক বাস চলাচল করলেও ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার দূরপাল্লার কিছু বাস নগরীতে পৌঁছার পর কিংবা নগরী ছেড়ে যাওয়ার সময় বিভিন্নস্থানে শ্রমিকরা বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নগরীর আগ্রাবাদে পোশাক শ্রমিকদের বহনকারী বাসে হামলার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়। সার্বিক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল কমে যায়। শনিবার ভোর থেকে দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক রুটে গণপরিবহন কম চলার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কর্মস্থলমুখী মানুষদের। মহাসড়কের মীরসরাই অংশের ৩০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি লোকাল ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারে কম।
শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেখা গেছে, অন্য দিনের তুলনায় বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, পিকআপসহ সবধরনের যান অনেক কম চলাচল করছে। বারইয়ারহাট-মাদারবাড়ি রুটে চলাচল করা চয়েস, উত্তরা বাস, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা বিভিন্ন চেয়ারকোচ ও আন্তঃজেলার বিভিন্ন বাসও খুব বেশি চোখে পড়েনি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা, কেরোসিনে ৩৪টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..


© কথা৭১.টিভি দ্বারা সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত।
themesbazarkotha71254