মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে দুইশত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ইছামতি মেলা।
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কাজল কর্ম কার
মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে দুইশ’ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ‘ইছামতির মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈশাখের শুরুতেই এই গ্রামীণ উৎসবকে ঘিরে রবিবার (২০ এপ্রিল) মেলা প্রাঙ্গণ হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।বাংলা ৬ বৈশাখ তারিখে প্রতি বছর শ্রীশ্রী ইছামতি দেবী (গঙ্গা দেবী) মন্দিরের পুণ্যভূমিকে কেন্দ্র করে বসে এই মেলা। প্রাচীন কালের এই পূজা ও মেলাকে ঘিরে এখন আর শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে।মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শতাধিক দোকানি তাদের নানা রকম পণ্য নিয়ে হাজির হন। মাটির তৈরি খেলনা ও শিল্পকর্ম, বাঁশ, বেত, কাঠ, শঙ্খ, লোহা ও গ্রামীণ হস্তশিল্পের বাহারি পণ্য, সব মিলিয়ে যেন লোকজ ঐতিহ্যের অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। শিশুদের জন্য খেলনা, ঘরোয়া ব্যবহারের আসবাব এবং গ্রামীণ খাদ্যদ্রব্যের পসরা ছিল জমজমাট।ইছামতি দেবীর পূজাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই মেলা এখন সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে চোখে পড়ে মানতকারীদের ভিড়। অনেকে মন্দিরসংলগ্ন বটগাছের গায়ে সূতো জড়িয়ে রেখে যান তাঁদের বিশ্বাস আর প্রার্থনার নিদর্শন। মেলার পরদিন চতুষ্প্রহর ব্যাপী নামসংকীর্ত্তনের মাধ্যমে শেষ হয় এবারের উৎসব।মেলায় অংশ নেওয়া মৃৎশিল্পী হরি চন্দ্র পাল বলেন, “প্রতি বছর ইছামতির মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও শোপিস বিক্রি করি। এখানকার ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাই। এই মেলা আমাদের গ্রামীণ শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ বাজার।দর্শনার্থী গৃহবধূ পপি রানী দে ও অপর্ণা নাথ বলেন, “বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। ইছামতির মেলা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়।স্থানীয় প্রধান শিক্ষক হৃদয় রঞ্জন দে বলেন, “বৈশাখ ও ইছামতির মেলা আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। এই মেলা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলা, যা বাঙালিয়ানার প্রকৃত পরিচয় বহন করে।মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি সুমন দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক মিন্টু কুমার পাল জানান, “দুই শত বছরের পুরোনো ইছামতির মেলা আমাদের গর্বের স্মারক। একসময় এই মেলায় বলীখেলা, পালাগান ও আসরগানের আয়োজন হতো। বর্তমানে সেসব বন্ধ থাকলেও ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া মেলার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে সহযোগিতা করেছেন।
Leave a Reply