শুক্লা আচার্যঃ- বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২১।বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস এর চরম আতঙ্কের মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে ১৪ তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এই দিবসটি সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মূল কার্যালয়ে ২ এপ্রিল দিবাগত রাত থেকেই তিনদিনব্যাপী রাতে নীল বাতি প্রজ্জ্বলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সাধারণত অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় হল এই দিবসের তাৎপর্য। অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালের ২ এপ্রিল কে “বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস” হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়।
এক সময় অটিজম ছিল একটি অবহেলিত জনসাস্থ ইস্যু। এ সম্পর্কে সমাজের নেতিবাচক ধারণা ছিল,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এর নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ২০০৭ সাল থেকে এ বিষয়ে আমাদের দেশে কাজ শুরু করেন।
এবার অটিজমের বৈশিষ্ট্য ও করণীয় নিয়ে বলি আমরা সাধারণত কমবেশি সবাই অটিজম এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানি যেমন এদের কারো আচরণ অতিরিক্ত চঞ্চল, আবার কেউ অতিরিক্ত গুটিয়ে থাকা স্বভাবের, আবার বেশির ভাগই যোগাযোগের অভাব ইত্যাদি থাকে। তাই এই নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। আমাদের অনেকের ধারণা রয়েছে ,যেমন অনেকেই মনে করেন অটিজম মানে মানসিক অসুস্থতা,কিন্তু তা নয় এটি একটি মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যা।গবেষণায় দেখা গেছে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে দুইপাশের গঠনে এবং নিউরোট্রান্সমিটার লেভেলে অসঙ্গতি রয়েছে।
আমাদের অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যেমন-অটিজম সেড়ে যাওয়া সম্ভব। বাস্তবতা হলো অটিজমের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনও উদ্ভাবন হয়নি। কিন্তু তাই বলে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না কিন্তু তাই বলে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বিহেবিয়ার মডিফিকেশন টেকনিক, প্রয়োজন অনুযায়ী অকুপেশনাল থেরাপি,স্পিচ থেরাপি এবং বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুর অনেকটা উন্নতি সম্ভব।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এ সারা বিশ্ব যখন নাকাল তখন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা আরো বেশি নাজুক, এই সময়ে তাদের বিশেষ যত্ন ও সেবার প্রয়োজন। তাদের দিকে সবথেকে বেশি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের তাদের জন্য আরো বেশি সচেতন হতে হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রাথমিক উপায়গুলো তাদেরকে অবশ্যই বেশি করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে । তাদের বেশিরভাগই ভিজুয়াল লার্নার হয়। তাই আমাদের উচিত প্র্যাকটিক্যালি তাদেরকে সবকিছু দেখানো ও শিখানো। পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই এই শিশুরা হলো “গড গিফটেড চাইল্ড” তারা হলো নিষ্পাপ। তাদের মধ্যে কোন কলুষতা নেই ।এরা স্বচ্ছ আয়নার মত। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো। বাংলাদেশে আজ ১৪ বছর ধরেই দিবসটি পালন করা হচ্ছে । তাই আশা করি সমাজে বেশিরভাগ মানুষই অটিজম সম্পর্কে অনেক জানে। তাই নতুন করে আর কিছু বলার নেই বলে আমি মনে করি। তাই এই ক্ষেত্রে আমাদের সবার মূল স্লোগান হওয়া উচিত-অবহেলা না করে স্নেহ-মমতায় তাদেরকে পরিবার ও সমাজে প্রতিষ্ঠা করি। তাই তাদের প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই উত্তম বলে মনে করছি।
Leave a Reply